//

Hot Posts

6/recent/ticker-posts

বাংলাদেশে শিক্ষা বৈষম্য: শহরভিত্তিক বিশ্লেষণ- (feature 2 in Bangla)

 বাংলাদেশে শিক্ষা বৈষম্য: শহরভিত্তিক বিশ্লেষণ

সালমূড
অক্টোবর ১২, ২০২৪

সরকারি স্কুলগুলির বৈষম্যের প্রভাব: একটি শহরভিত্তিক বিশ্লেষণ

প্রত্যেক সমাজে ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে তোলার মূল ভিত্তি হলো শিক্ষা। এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হলো সরকারি স্কুল, যা বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক পটভূমির শিশুদের জন্য সহজলভ্য শিক্ষা প্রদান করে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যা প্রায়শই উপেক্ষিত থাকে তা হলো বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলের সরকারি স্কুলগুলির মধ্যে শিক্ষার গুণমানের বিশাল বৈষম্য। এই বৈষম্য—যা অবকাঠামো, শিক্ষার মান, সম্পদ বরাদ্দ এবং প্রশাসনিক নীতিমালার মতো বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে—লক্ষ লক্ষ শিশুর ভবিষ্যতকে ভিন্নভাবে গড়ে তুলছে।


বৈষম্য পূরণ করা

সরকারি স্কুলগুলির অসম ল্যান্ডস্কেপ

সরকারি স্কুলগুলির মূল লক্ষ্য হলো সর্বজনীন শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা, যা প্রায় কোন খরচ ছাড়াই দেওয়া হয়। এটি নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুদের জন্য অমূল্য, যারা বেসরকারি স্কুলের খরচ বহন করতে অক্ষম। তবে, বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলে সরকারি স্কুলের শিক্ষার মান উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়। এটির কারণগুলো হলো:

অবকাঠামোগত বৈষম্য: শহরাঞ্চলে, সরকারি স্কুলগুলো আধুনিক অবকাঠামো, ভালোভাবে সজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার এবং ডিজিটাল শিক্ষার সম্পদ নিয়ে গর্ব করে। বিপরীতে, অনেক গ্রামীণ বা অবহেলিত অঞ্চলের স্কুলগুলিতে জরাজীর্ণ ভবন, পর্যাপ্ত আসনের অভাব এবং এমনকি পরিষ্কার পানির অভাব বা কার্যকরী শৌচাগারের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসও থাকে না। এই অবকাঠামোগত বৈষম্য সরাসরি শিশুর শেখার পরিবেশ এবং সামগ্রিক শিক্ষাগত অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করে।

শিক্ষক প্রাপ্যতা ও গুণমান: শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার আরেকটি কারণ হলো শিক্ষকদের প্রাপ্যতা ও দক্ষতা। উন্নত শহরগুলোতে, সরকারি স্কুলগুলো প্রশিক্ষিত ও অনুপ্রাণিত শিক্ষকদের আকর্ষণ করতে পারে যারা আধুনিক শিক্ষাদানের পদ্ধতি ব্যবহার করে। তবে, দূরবর্তী বা গ্রামীণ এলাকায় যোগ্য শিক্ষকদের ঘাটতি রয়েছে, যা অতিরিক্ত জনসংখ্যার ক্লাসরুম বা কম অভিজ্ঞ শিক্ষকদের উপর নির্ভরশীলতার দিকে পরিচালিত করে। এই অসঙ্গতি শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফলে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে।

সম্পদ বরাদ্দ: ধনী শহর বা অঞ্চলের সরকারি স্কুলগুলো প্রায়ই বেশি তহবিল পায়, কারণ তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বেশি। এই স্কুলগুলো অতিরিক্ত কার্যক্রম, কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞান সরঞ্জাম এবং ক্রীড়া সুবিধা দিতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের আরও বেশি শেখার সুযোগ দেয়। বিপরীতে, কম সমৃদ্ধ বা গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলো প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের অভাবে ভুগছে।

পাঠ্যক্রম প্রয়োগ: যদিও জাতীয় পাঠ্যক্রম অভিন্ন, এর বাস্তবায়ন ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। উন্নত শহরের স্কুলগুলোতে পাঠ্যক্রম সংস্কার করা সহজ, নতুন শিক্ষাপদ্ধতি ব্যবহার করা সম্ভব। তবে, দরিদ্র অঞ্চলের স্কুলগুলো শিক্ষাসামগ্রী, আপডেট করা পাঠ্যবই, বা প্রশিক্ষণের অভাবে পাঠ্যক্রম বজায় রাখতে লড়াই করে।

বৈষম্য কীভাবে প্রজন্মকে আকার দিচ্ছে

শিক্ষাগত অর্জন: সমৃদ্ধ সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা সম্পন্ন করতে এবং উচ্চতর পড়াশোনা করতে বেশি সম্ভাবনা রাখে। বিপরীতে, দরিদ্র স্কুলের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফলতার পথে বাধার সম্মুখীন হয়, যার ফলে ঝরেপড়ার হার বেড়ে যায় এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ কমে যায়।

সামাজিক ও মানসিক বিকাশ: ভালো অবকাঠামো এবং শিক্ষিত কর্মীদের সাথে স্কুলগুলিতে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। অন্যদিকে, দরিদ্র স্কুলের শিক্ষার্থীরা অবহেলিত বা অনুপ্রাণিত হতে পারে।

মেধাগত দক্ষতা ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা: উন্নত শহরগুলির স্কুলগুলিতে শিক্ষার্থীরা সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের উপর ফোকাস করে, যখন কম ভাগ্যবান এলাকায় ছাত্রদের কেবল মুখস্থ শিক্ষা সীমাবদ্ধ করা হয়।

সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা

এই বৈষম্যগুলো মোকাবিলার জন্য সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের কাজ করতে হবে। সমতা ভিত্তিক অর্থায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, এবং সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার গুণমান উন্নয়নের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ফিচার লিংক: https://allnewsroundtheclock.blogspot.com/2024/10/feature-bangladesh-education.html

Post a Comment

1 Comments